কাব্যসমগ্র – হুমায়ুন আজাদ। হুমায়ুন আজাদের কবিতা, কবিতার বই, কাব্যগ্রন্থ।
আগামী প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ ফাল্গুন ১৪০৪: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮
ফ্ল্যাপের লেখা :
হুমায়ুন আজাদ, শ্রেষ্ঠ কবিতার ভূমিকায়, লিখেছিলেন কবিতা তাঁর কাছে সৌন্দর্যের বিরামহীন বিস্তার, ইন্দ্রিয়ের অনন্ত আলােড়ন, জীবাশ্মের মতাে নির্মোহ মহর্ষির প্রাজ্ঞতা, ধ্যানের অবিচল উৎসরণ, জীবনের আদিম উচ্ছল উৎসব, রূপক প্রতীক চিত্রকল্পের নির্বাণহীন অঙ্গার। বাঙলাদেশের প্রধান বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ, দুরূহতম বিষয় থেকে সরলতম আবেগর অপরূপ প্রকাশ ঘটে তাঁর লেখায়। বাঙলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি হুমায়ুন আজাদ; জনপ্রিয় ধারায় তিনি কবিতা উৎপাদন করে চলেন নি; তাঁর কাব্যসমগ্রে পাওয়া যায় তার সময়ের শ্রেষ্ঠ আবেগ উপলব্ধি কামনা বাসনা সৌন্দর্যবােধ; পাওয়া যায় বাঙলা ভাষার সুস্থতম সৃষ্টিশীল রূপটি। হুমায়ুন আজাদ জনপ্রিয় বিষয়গুলাে নিয়ে মাতেন নি, মুখর হন নি শ্লোগানে; এমনিক প্রথাগত পাঠকেরা যে-অন্তরঙ্গ কণ্ঠস্বর শুনে বিহ্বল হতে ভালােবাসেন, সে-স্বরেও কবিতার নামে পদ্য দিয়ে তিনি বিভ্রান্ত করেন নি পাঠকদের। তাঁর কবিতা অপূর্ব অসামান্য চিত্রকল্প, তীব্র আবেগ, পরিস্রত বাঙলা ভাষার মিলন। তিনি সর্বাংশে আধুনিক; তিনি নগর পেরিয়ে এগিয়েছেন প্রকৃতির দিকে, আধুনিকের আবেগ দিয়ে উপলব্ধি করেছেন বহু বছর উপেক্ষিত নিসর্গকে; মৃত্যুবােধ ও ব্যক্তিগত যন্ত্রণার এমন আন্তরিক প্রকাশ ঘটিয়েছেন, যার তুলনা সহজলভ্য নয়। হুমায়ুন। আজাদের এই অনবদ্য কাব্যসমগ্রটি পাঠকদের সুখী করে চলবে দশকের পর দশক।
উৎসর্গ
সন্ত চন্দ্রাবতী
হয়তাে আমি দ্রুত পৌছে যাবাে, ফিরে
এসেছি চরম অন্ধকার থেকে; আদিম তিমিরে
লুপ্ত ছিলাম যেখানে শিশির নেই, মানুষের মুখ
অর্থহীন, শুধু অন্ধকার অতি,
যে-আঁধার থেকে উদ্ধার সন্ত চন্দ্রাবতী।
ভূমিকা
অজস্র অসংখ্য কবিতা লেখার মনােরম দেশে আমি কবিতা লিখেছি কমই। অনুরাগীদের দীর্ঘশ্বাসে আমি প্রায়ই কাতর হই যে দিনরাত কবিতা লেখা উচিত ছিলাে আমার । অনেক ভুলই হয়তাে সংশােধিত হতে পারে; তবে আমার এ-ভুল বা অপরাধ সংশােধন অসাধ্য। অবশ্য মধুর আলস্যে জীবন উপভােগ আমি করি নি; বন্ধুরা যখন ধ্বংসস্তুপের ওপর বসে উপভােগ করছেন তাদের অতীত কীর্তি, সিসিফাসের মতাে আমি পাথর ঠেলে চলছি। কবিতার মতাে প্রিয় কিছু নেই আমার বলেই বােধ করি, তবে আমি শুধু কবিতার বাহুপাশেই বাধা থাকি নি; কী করেছি হয়তাে অনেকেরই অজানা নয়। কবিত কেনাে লিখলাম? খ্যাতি, সমাজবদল, এবং এমন আরাে বহু মহৎ উদ্দেশ্যে কবিতা আমি লিখি নি বলেই মনে হয়; লিখেছি সৌন্দর্যসৃষ্টির জন্যে, আমার ভেতরের চোখ যে-শােভা দেখে, তা আঁকার জন্যে আমার মন যেভাবে কেঁপে ওঠে, সে-কম্পন ধরে রাখার জন্যে। মানুষের অনন্ত সৃষ্টিশীলতা আমার ভেতর দিয়েও প্রকাশ পাক কিছুটা, এমন একটা ব্যাপারও হয়তাে আছে। জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা আমি করি নি; যদিও আমার কবিতা অপ্রিয় নয়। কবিতা প্রলাপ নয়, তবে প্রলাপ ও কবিতা আজ অভিন্ন অনেকের কাছে; এটা এখনকার এক জনপ্রিয় রােগ। আমার কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা বেশি নয়, ছ-টি, ষাটটি হ’লে গৌরব করা যেতাে; ওগুলাে থেকে বাছাই করে একটি শ্রেষ্ঠ কবিতাও বেরিয়েছিলাে; এবার বেরােলাে কাব্যসংগ্রহ, অনুরাগীদের ও প্রিয় ওসমান গনির আগ্রহে। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ অলৌকিক ইস্টিমার, যার জন্যে আমার বেশ মায়া; ওটিতে বেঁচে আছে আমার কাতর সুখী অসুখী প্রথম যৌবন। এ-সংগ্রহের মুদ্রণ সংশােধন করতে গিয়ে প্রথম যৌবনের উচ্ছাসকে স্নেহের চোখে দেখা সম্ভব হলাে না; তাই নানা বদল ঘটলাে এর। সংশােধিত হলাে অন্যান্য কাব্যের কিছু কবিতাও। বদল করেছি কয়েকটি জিনিশ; কমিয়েছি উচ্ছ্বাস অতিশয়ােক্তি, হেঁটে দিয়েছি নিরর্থ বিশেষণ, শব্দ ও বাক্যাংশ, দমিয়েছি যতিচিহ্নের নির্বিচারিতা। এ-সংগ্রহটি আমার কবিতার । গ্রহণযােগ্য পাঠ । নিজের কবিতা সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই না; শুধু বলি আমি কবিতা লিখেছিলাম, লিখছি, এবং লিখবাে; এটা আমাকে সুখী এবং আমার বেঁচে থাকাকে সুখকর করেছে অন্য আর কিছু এতােটা করে নি।
হুমায়ুন আজাদ
১৪ই ফুলার রোড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা
১২ মাঘ ১৪০৪ : ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৮
প্রকাশকের কথা
১৯৯৮-এ প্রকাশিত কাব্যসংগ্রহ-এর ভূমিকা এখানে পুনর্মুদ্রণ করা হলো। বইটি প্রকাশের পর হুমায়ুন আজাদের আরও একটি এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘পেরোনোর কিছু নেই’ প্রকাশিত হয়। এ-বইটি ছাড়াও তাঁর আরও কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা এখানে মুদ্রিত হলো। এটি হুমায়ুন আজাদের কবিতার সম্পূর্ণ সংগ্রহ এবং শুদ্ধপাঠ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.